শান্তিতে নোবেল বিজয়ী প্রথম মুসলিম নারী কে ?
প্রশ্ন: শান্তিতে নোবেল বিজয়ী প্রথম মুসলিম নারী কে ?
ক. মালালা ইউসুফজাই
খ. শিরিন এবাদি
গ. নার্গিস মোহাম্মদী
ঘ. তাওয়াক্কোল কারমান
উত্তর: (খ) শিরিন এবাদি ।
ব্যাখ্যা:-
শান্তিতে নোবেল বিজয়ী প্রথম মুসলিম নারী হলেন " শিরিন এবাদি । ২০০৩ সালে প্রথম মুসলিম নারী হিসেবে শিরিন এবাদি শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন । তিনি ছিলেন ইরানের আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী । নোবেল বিজয়ী প্রথম আরব নারী হলেন " তাওয়াক্কুল কারমান " । তিনি ছিলেন ইয়েমেনের নাগরিক । প্রথম মুসলিম হিসেবে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন " আনোয়ার শাহাদাত " । তিনি ছিলেন মিশরের ।
শিরিন এবাদি (Shirin Ebadi) হলেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী প্রথম মুসলিম নারী, যিনি ২০০৩ সালে এই সম্মান লাভ করেন। তার এই অর্জন কেবল তার নিজের জন্য নয়, বরং বিশ্বের সমস্ত নারী ও বিশেষত মুসলিম নারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এই প্রবন্ধে শিরিন এবাদির জীবন, তার কাজ, এবং শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে আলোচনা করা হবে।
শিরিন এবাদির প্রাথমিক জীবন:
শিরিন এবাদির জন্ম ২১ জুন, ১৯৪৭ সালে ইরানের হামাদান শহরে। তিনি তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন নিয়ে পড়াশোনা করেন এবং ১৯৬৯ সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি তেহরান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনশাস্ত্রে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ইরানের প্রথম নারী বিচারক হিসেবে কাজ শুরু করেন এবং তার যোগ্যতা ও দক্ষতার জন্য বিচারক হিসেবে দ্রুত পরিচিতি লাভ করেন।
বিচারব্যবস্থা ও মানবাধিকার রক্ষায় কাজ:
১৯৭৯ সালের ইরানের ইসলামিক বিপ্লবের পর, নারীদের বিচারক পদে কাজ করার অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। শিরিন এবাদি বিচারপতি পদ থেকে বরখাস্ত হন এবং তাকে প্রশাসনিক কাজ করতে বাধ্য করা হয়। তবে তিনি সহজে হার মানার মানুষ ছিলেন না। তিনি আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন এবং মানবাধিকার, বিশেষত নারীদের ও শিশুদের অধিকার রক্ষায় নিজেকে নিয়োজিত করেন।
গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলো:
শিরিন এবাদি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মামলায় কাজ করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে সাংবাদিক ও ছাত্রদের অধিকার রক্ষার মামলা, রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির জন্য আইনি লড়াই, এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো। তার সাহসী এবং নির্ভীক নেতৃত্ব তাকে ইরানের সরকার ও অন্যান্য প্রভাবশালী মহলের বিরাগভাজন করেছে, কিন্তু তিনি তার কাজ অব্যাহত রেখেছেন।
নোবেল পুরস্কার এবং তার প্রাসঙ্গিকতা:
২০০৩ সালে শিরিন এবাদিকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। নোবেল কমিটি তার "গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার, বিশেষ করে নারীদের এবং শিশুদের অধিকার রক্ষায়" তার অবদানকে স্বীকৃতি দেয়। তিনি এই পুরস্কার পাওয়ার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী নারীদের এবং বিশেষত মুসলিম নারীদের জন্য একটি উদাহরণ স্থাপন করেন, যা প্রমাণ করে যে সাহসিকতা এবং দৃঢ়সংকল্প দিয়ে কোনো প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
প্রভাব ও উত্তরাধিকার:
শিরিন এবাদির নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর থেকে তিনি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন এবং বিভিন্ন ফোরামে বক্তৃতা দিচ্ছেন। তিনি বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো "ইরানের জেলখানায়: একটি মানবাধিকার কর্মীর গল্প" (Iran Awakening: A Memoir of Revolution and Hope)।
উপসংহার:
শিরিন এবাদির জীবন এবং কাজ প্রমাণ করে যে ন্যায়বিচার এবং মানবাধিকারের জন্য সংগ্রাম কোনো সীমানা মানে না। তার অবদান কেবল ইরানের জনগণের জন্য নয়, বরং সারা বিশ্বের মানুষের জন্য একটি অনুপ্রেরণা। শান্তিতে নোবেল বিজয়ী প্রথম মুসলিম নারী হিসেবে তিনি এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন এবং তার কাজ ও আদর্শ আমাদের সবার জন্য প্রেরণাদায়ক। তার সাহস, দৃঢ়সংকল্প, এবং মানবাধিকার রক্ষায় অবদান বিশ্বের মানবাধিকার আন্দোলনে একটি বিশেষ স্থান দখল করে রেখেছে।