রেমাল ঘূর্ণিঝড় নামকরণ করে কোন দেশ ?

প্রশ্ন:  রেমাল ঘূর্ণিঝড় নামকরণ করে কোন দেশ ? 


ক.  পাকিস্তান 

খ.  মায়ানমার 

গ.  ভারত 

ঘ.  ওমান 


উত্তর:  (ক) পাকিস্তান  । 


ব্যাখ্যা:- 


ঘূর্ণিঝড় রেমাল (Remal) নামটি ২০২৩ সালে ভারত মহাসাগরের একটি ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এই নামটি পাকিস্তান দ্বারা প্রদত্ত এবং এটি ঘূর্ণিঝড় নামকরণের প্রক্রিয়ার একটি অংশ হিসেবে নির্বাচিত হয়। ঘূর্ণিঝড় নামকরণের প্রক্রিয়া বেশ কৌতূহলোদ্দীপক এবং এর পেছনে অনেক কারণ ও ইতিহাস রয়েছে। 

ঘূর্ণিঝড় নামকরণের মূল উদ্দেশ্য হলো ঝড়ের সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা এবং তথ্য বিনিময় সহজ করা। নামকরণের ফলে ঝড়ের পূর্বাভাস, সতর্কীকরণ এবং তথ্য প্রচারে সুবিধা হয়, যা মানুষের জীবন ও সম্পদের সুরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ভারত মহাসাগর অঞ্চলের দেশগুলো যৌথভাবে এই নামকরণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে।

২০০০ সালে, ভারত মহাসাগরের আটটি দেশ - ভারত, বাংলাদেশ, মিয়ানমার, মালদ্বীপ, ওমান, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা এবং থাইল্যান্ড - একত্রিত হয়ে ঘূর্ণিঝড় নামকরণের একটি পদ্ধতি প্রবর্তন করে। পরবর্তীতে ইরান, কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ইয়েমেন এই পদ্ধতিতে যোগ দেয়। মোট ১৩টি দেশ মিলে একটি প্যানেল তৈরি করে, যা বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (WMO) সহযোগিতায় কাজ করে।

প্রতিটি দেশ কিছু নির্দিষ্ট নামের প্রস্তাব করে এবং এই নামগুলো একটি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যখনই একটি নতুন ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়, তখন ধারাবাহিকভাবে এই তালিকা থেকে একটি নাম নির্বাচন করা হয়। এই পদ্ধতিতে, ১৩টি দেশের প্রস্তাবিত নামগুলি পর্যায়ক্রমে ব্যবহার করা হয়। রেমাল নামটি পাকিস্তান থেকে প্রস্তাবিত এবং এটি ব্যবহার করার অর্থ হলো প্যানেলের তালিকায় এটি পর্যায়ক্রমে এসেছে।

ঘূর্ণিঝড় রেমাল যখন ভারত মহাসাগরে তৈরি হয়, তখন এটি দ্রুত গতিতে শক্তিশালী হয় এবং বিপুল ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা নিয়ে এগোয়। ঝড়টির ব্যাপারে পূর্বাভাস প্রদানকারী সংস্থাগুলো দ্রুত সতর্কতা জারি করে এবং জনগণকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ হওয়ার ফলে, ঝড় সম্পর্কে তথ্য সহজেই প্রচারিত হয় এবং সাধারণ মানুষ ঝড়টির সম্পর্কে সচেতন হতে পারে।

পাকিস্তান একটি সমুদ্রতীরবর্তী দেশ হিসেবে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব সম্পর্কে অবগত এবং এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশের মতো তারাও ঝড়ের নামকরণের প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে। ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের মাধ্যমে ঝড়ের প্রভাব এবং তীব্রতার বিষয়ে আরও সহজে তথ্য বিনিময় করা যায় এবং জনগণকে প্রস্তুত করা যায়।

রেমাল নামটি নির্বাচনের মাধ্যমে পাকিস্তান একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এবং এই নামটি ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে যুক্ত থাকার ফলে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করেছে। এই ধরনের নামকরণের প্রক্রিয়া শুধু তথ্য বিনিময়কেই সহজ করে না, বরং আন্তঃদেশীয় সহযোগিতা এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রতীক হিসেবেও কাজ করে। 

ঘূর্ণিঝড় নামকরণের মাধ্যমে, ভারত মহাসাগর অঞ্চলের দেশগুলি একত্রিত হয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করে। রেমাল নামটি এরই একটি উদাহরণ এবং এটি প্রমাণ করে যে নামকরণ প্রক্রিয়া কিভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবেলায় সহায়ক হতে পারে।
Next Post Previous Post